কোভিড-১৯নিয়ে আতঙ্ক নয়, সচেতনতা
মাস্কের ব্যবহার
নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু,বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মাস্কের সংকট দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় এর দামও অত্যধিক বেড়ে গিয়েছে।
মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী বলছে?
কখন ও কেন মাস্ক ব্যবহার করবেন
* করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বা সন্দেহ করা হচ্ছে—এমন ব্যক্তির শুশ্রূষা করার সময়ই শুধু আপনার মাস্ক পরার প্রয়োজন রয়েছে।
* হাঁচি বা কাশি থাকলে মাস্ক ব্যবহার করুন, যেন আপনার শরীরে করোনাভাইরাস থাকলে তা অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়।
* মাস্ক ব্যবহার তখনই কার্যকর, যখন আপনি অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড রাব (বাজারে থাকা সাধারণ হেক্সিসল বা অনুরূপ পণ্য) বা সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করেন।
* মাস্ক ব্যবহার করতে হলে এর ব্যবহারবিধি জেনেই করা উচিত।
কীভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন
* মাস্ক পরার আগে হাত (সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড বা হ্যান্ড রাব দিয়ে) পরিষ্কার করে নিবেন।
* মাস্ক পরার সময় এর সামনের অংশ ধরবেন না।
* নাক ও মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে ফেলুন এবং মনে রাখবেন, মুখ ও মাস্কের মধ্যে যেন কোনো ফাঁকা স্থান না থাকে।
* ব্যবহারের সময় মাস্ক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। আর যদি স্পর্শ করেন, তবে হাত (সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড বা হ্যান্ড রাব দিয়ে) পরিষ্কার করে নিন।
* ব্যবহৃত মাস্কটি আর্দ্র বা ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে মনে হওয়ামাত্রই তা বদলে ফেলুন।
ডিসপোজিবল বা একবার ব্যবহারের জন্য তৈরি মাস্ক বারবার ব্যবহার করবেন না।
* মাস্ক অপসারণের সময় এর সামনের অংশ স্পর্শ করবেন না।
মাস্ক খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তা ঢাকনা দেওয়া ময়লার বাক্সে ফেলুন।
* মাস্ক অপসারণের পর হাত পরিষ্কার করে নিন।
উপসর্গ প্রকাশ পেতে ৫-১০দিন সময় লাগবে
করোনাভাইরাস মহামারি দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির গুরুতর লক্ষণ দেখা না গেলেও সংক্রমিত ব্যক্তিরা এটি সহজেই ছড়াতে পারে। করোনাভাইরাসের প্রথম উপসর্গ টের পেতে ৫ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তাই যাঁদের করোনাভাইরাস একেবারে প্রাথমিক ধাপে, তাঁদেরও কোনো জনসমাগমস্থলে যাওয়া উচিত নয়। এতে তাঁরা অন্যদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেন।
বয়স্কদের জন্য সুব্যবস্থা করা
বিশ্বের অনেক দেশেই বলা হয়েছে, ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিরা, যাঁদের দৈহিক বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে, তাঁরা যেন জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলেন। তাঁরা যেন বাড়িতে থাকেন। বয়স্কদের সাবধানে কীভাবে রাখবেন, এর জন্য কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে—
ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত রাখা
দরকারি ওষুধ ও প্রয়োজনীয় জিনিস আগে থেকে কিনে বাড়িতে রাখতে হবে। বাড়িতে বয়স্করা দুর্বল ও দীর্ঘদিন অসুস্থ হলে , বেশ কিছু সপ্তাহের ওষুধ ও অন্যান্য জিনিস বাড়িতেই যেন রাখা হয়। প্রয়োজনীয় খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা পণ্যের সরবরাহগুলো আগে থেকে মজুত করে রাখুন। প্রিয়জনদের কী কী ওষুধ প্রয়োজন, তার খেয়াল পরিবার যেন রাখে। বাসার বয়স্কদের দিকে একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিন।
পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। ২০ সেকেন্ড ধরে নিজেদের হাত সাবান–পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পরামর্শ করোনাভাইরাস সচেতনতার জন্য সবাই দিচ্ছেন। যদি হ্যান্ডওয়াশ-পানি না থাকে, সে ক্ষেত্রে স্যানিটাইজার দিয়েও হাত ভালোভাবে ঘষে নিতে হবে। বাড়ি ও কর্মক্ষেত্রের জায়গাও যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে হবে। নিয়মিত বাড়ি ও কাজের জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করুন। এমনকি ইলেকট্রনিকসের জিনিসগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
কোনো জিনিস শেয়ার নয়
যৌথ পরিবারে সবাই একসঙ্গে থাকেন। একেকজনের ঝুঁকি একেক ধরনের হতে পারে। এ রকম অবস্থায় সবারই ঝুঁকি রয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে। একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, একই পরিবারে বৃদ্ধ ও শিশুরা থাকে। তাদের এই সময়ে বা মাঝেমধ্যে সর্দি-কাশি হয়। সে ক্ষেত্রে পরিবারের উচিত ব্যক্তিগত সব জিনিস এই মুহূর্তে আলাদা ব্যবহার করা। যেমন খাবার, জলের বোতল, বাসন-পাত্র। প্রয়োজন হলে বাড়ির একটি আলাদা ঘরে অসুস্থ সদস্যকে রেখে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থাও করলে আরও ভালো হয়।
অনেক বৃদ্ধই আছেন, যাঁরা একা একা থাকেন। সে ক্ষেত্রে কীভাবে তাঁরা নিজেদের যত্ন নেবেন, সে বিষয়ে আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। ফোন বা ই–মেইল কীভাবে ব্যবহার করবেন, জরুরি ফোন নম্বর, চিকিৎসকের নম্বর সব যেন হাতের কাছে থাকে।
আতঙ্ক নয়, আলোচনা করুন
অযথা আতঙ্কিত না হয়ে কোভিড-১৯ সম্পর্কে প্রতিবেশী, পরিবার-স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে আগাম প্রস্তুতি কী হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা করে রাখুন। কোভিড-১৯ সম্পর্কে যতটা সম্ভব সচেতনতা বাড়াতে হবে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটা আরও প্রয়োজন। তাঁরা যাতে কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে না বের হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বৃদ্ধদের আশ্বস্ত করুন যে এ রোগে ভয়ের কিছু নেই।
চিকিৎসকদের পরামর্শ মানুন
করোনা নিয়ে আতঙ্ক না বাড়িয়ে চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ মেনে চলাই শ্রেয়। কিছুদিন বৃদ্ধদের বাড়ির বাইরে বের হতে না দিয়ে বাড়িতেই রাখতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ফিট থাকার শরীরচর্চা এই সময় তাঁরা করতে পারেন। স্বাস্থ্যকর খাবার এ সময় খুব প্রয়োজন। সর্দি-কাশি হলে তা এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
করোনার ভয়ে বিশ্ববাসী রীতিমতো একঘরে হয়ে রয়েছেন। বিশ্বের অনেক দেশ তাদের শহরগুলো লকডাউন করেছে।
বেশিরভাগ করোনা রোগী এই ছয়টি লক্ষণের কথা বলছেন
করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। একজন করোনা আক্রান্ত রোগীর কি কি লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা জানা আবশ্যক। ঠান্ডা, জ্বর, কাশি ছাড়াও আরো বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে একজন করোনা রোগীর।
করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কয়েকজন বলেছেন …..
👉পুরো শরীর জুড়ে ব্যাথা থাকবে। মনে হতে পারে আপনার মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে, সেই সাথে চোখ জ্বালা, গলা ব্যাথা। এগুলো করোনা রোগীর প্রথম লক্ষণ।
👉কানের ভেতরে মাঝামাঝি এবং ভেতরের অংশের মাঝখানে ইউচটেসিয়ান টিউব থাকে। মাঝে মধ্যে ইউচটেসিয়ান টিউবে চাপ দিয়ে দেখতে হবে ব্যাথা আছে কিনা।
তৃতীয়: প্রচন্ড মাথা ব্যাথা থাকবে। মনে হতে পারে কেউ মাথায় সজোরে আঘাত করছে।
চতুর্থ: চোখ জ্বালা, চুলকানি থাকতে পারে। সেই সাথে শরীরে জ্বর থাকবে।
👉প্রচন্ড গলা ব্যাথা থাকবে। শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হবে, খাবার খাওয়ার সময়ও অনেক ব্যাথা হবে গলায়।
👉পুরো শরীরে ব্যাথা থাকবে। কেবল কান বা বুকে নয়। সেই সাথে হাত এবং পায়েও ব্যাথা থাকবে।
করোনামুক্ত দেশ ও অঞ্চলগুলো হলো-
১. মিয়ানমার।
২. বুরুন্ডি।
৩. বতসোয়ানা।
৪. বেলিজ।
৫. কেপভার্দে।
৬. কোট ডি’আইভায়ার।
৭. শাদ।
৮. কমোরোস।
৯. ডোমিনিকা।
১০. ইরিত্রিয়া।
১১. গ্রেনাডা।
১২. গিনি বিসাউ।
১৩. হাইতি।
১৪. হোলি সি।
১৫. কিরিবাতি।
১৬. লাওস।
১৭. লেসোথ।
১৮. লিবিয়া।
১৯. মাদাগাস্কার।
২০. মালাউই।
২১. মালি।
২২. মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ।
২৩. মাইক্রোনেশিয়া।
২৪. মোজাম্বিক।
২৫. নাউরু।
২৬. নাইজার।
২৭. উত্তর কোরিয়া।
২৮. পালাউ।
২৯. পাপুয়ানিউগিনি।
৩০. সেন্ট ভিনসেন্ট।
৩১. গ্রেনাডাইন্স।
৩২. সাও টম অ্যান্ড প্রিন্সিপি।
৩৩. সিয়েরালিওন।
৩৪. সলোমন দ্বীপপুঞ্জ।
৩৫. দক্ষিণ সুদান।
৩৬. সিরিয়া।
৩৭. তাজিকিস্তান।
৩৮. পূর্ব তিমুর।
৩৯. টোঙ্গা।
৪০. তুর্কমিনিয়া।
৪১. টুভালু।
৪২. ইয়েমেন।
করোনা থেকে তরুণদেরও রেহাই নেই ॥
করোনাভাইরাসের এতদিনের চিত্রে তরুণ-তরুণীদের মৃত্যুহার অপেক্ষাকৃত কম দেখা গেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলেছে, করোনা থেকে রেহাই পাবে না তরুণরাও। সেজন্য তাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
Comments